রোজ ‘বৃদ্ধ’ ট্যাঙ্কটা দেখে আশঙ্কায় কাঁপত বুক। হকাররা ভয়ের চোখে তাকাত সেই জলের ট্যাঙ্কের দিকে। মাঝে মধ্যে বুকটা ছ্যঁৎ করে উঠত অনেকেরই। আর সেই আশঙ্কাই সত্যি হল-রক্তাক্ত বর্ধমান স্টেশন।
বর্ধমান স্টেশনের দুই এবং তিন নম্বর স্টেশনের মাঝে বয়সের ভার নিয়েই দাঁড়িয়েছিল শতবর্ষ পার করা প্রাচীন জলের ট্যাঙ্ক।
হকারদের মতে, ‘এই ট্যাঙ্কটা দেখে রোজ ভয় হত। কিন্তু, সেই আশঙ্কা যে এভাবে সত্যি হবে ভাবিনি।’
বুধের দুপুতে,বর্ধমান স্টেশনে হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়ল জলের ট্যাঙ্ক। শেষ পাওয়া খবর পর্যন্ত এই ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে তিন জনের।
কী ভাবে এই দুর্ঘটনা?
ওই ট্যাঙ্কের আদৌ কি রক্ষণাবেক্ষণ হত?
এসব একাধিক প্রশ্নের উত্তরে কি জানালো রেল?
পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক কৌশিক মিত্র এদিন ঘটনাস্থলে পৌঁছন। তিনি বলেন, ‘১৮৯০ সালে তৈরি হয়েছিল এই ট্যাঙ্কটি। নিয়মিত এটির দেখাশোনা করা হয়। বুধবার বেলা ১২টা নাগাদ এই জলের ট্যাঙ্কটি ভেঙে পড়ার খবর সামনে আসে। তৎক্ষনাৎ শুরু হয়ে যায় উদ্ধারকাজ। আহতদের বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।’
২০ থেকে ২২ জন আহত বলে জানান তিনি। তবে রেলের তরফে জানানো হয়, এখনও পর্যন্ত এই ঘটনায় হতাহতের কোনও খবর নেই। কৌশিক মিত্র জানান, এই জলের ট্যাঙ্কটির প্রতিনিয়ত রক্ষণাবেক্ষণ করা হয়। সেক্ষেত্রে কী কারণে এই দুর্ঘটনা, তা এখনও স্পষ্ট নয়।
তবে রেলের পক্ষ থেকে আরো জানানো যাচ্ছে কী ভাবে বর্ধমান স্টেশনে ভেঙে পড়ল এই জলের ট্যাঙ্ক? তা পর্যবেক্ষণ করতে ইতিমধ্যেই তিন সদস্যের একটি উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এই কমিটির রিপোর্ট সামনে আসার পরেই দুর্ঘটনার প্রকৃত কারণ বলা সম্ভব, জানান কৌশিক মিত্র।
কী বলছেন বর্ধমানের পুলিশ সুপার?
বর্ধমানের পুলিশ সুপার আমনদীপ অবশ্য তিন জনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, ‘আমরা প্রায় সাড়ে বারোটা নাগাদ এই দুর্ঘটনার তথ্য পাই। জানতে পারি প্ল্যাটফর্ম নম্বর ২ এবং ৩-এর মধ্যে একটি জলের ট্যাঙ্ক ফেটে যায়। ফলে জল শেডে পড়ে এবং তা ভেঙে যায়। কিছু যাত্রী আহত হন। আমাদের থানার তরফে আধিকারিকরা সঙ্গে সঙ্গে ঘটনাস্থলে পৌঁছন। এখনও পর্যন্ত জানতে পেরেছি তিন জনের মৃত্যু হয়েছে এবং ১৭ জন আহত।’
ইতিমধ্যেই বর্ধমান স্টেশনে ১ এবং ৪ নম্বর প্ল্যাটফর্মে গাড়ি চলাচল শুরু হয়েছে। ২ এবং ৩ নম্বর প্ল্যাটফর্ম বন্ধ। ফলে , চার নম্বর প্ল্যাটফর্মে থিকথিকে ভিড়। বন্দে ভারত যাওয়ার ক্ষেত্রে কোনও সমস্যা হবে না বলে জানা যাচ্ছে।