যুবভারতীতে আগের ম্যাচে এই ওড়িশা কাছেই হেরে গিয়ে এফসি কাপ থেকে ছিটকে গিয়েছিল মোহনবাগান সেই ঘায়ে মলম লাগার আগেই আবারও সামনে সেই ওড়িশা এফসি,
ম্যাচ শুরুর আগেই মোহনবাগান শিবিরে এবার কিন্তু একটি দুঃখের খবর নেমে আসে ওয়ার্মআপে চোট পেয়ে বসের মাঝ মাঠে প্রধান ভরসা হুগো বুমোস।
প্রতিকূল পরিস্থিতিতেও খেলা শুরু হওয়ার পাঁচ মিনিটের মধ্যেই পেনাল্টি বক্সের বাইরে থেকে নেওয়া সাদিকুর শট ক্রসবারের উপর দিয়ে চলে যায়। ১০ মিনিটে কিয়ানের কাছ থেকে বল পেয়ে ওড়িশার পেনাল্টি বক্সের মধ্যে ঢুকে পড়েছিলেন তিনি। কিন্তু সামনে গোলরক্ষক অমরিন্দর সিংহকে একা পেয়েও অবিশ্বাস্য ভাবে ক্রসবারের উপর দিয়ে মারলেন। আরও তীব্র হল সমর্থকদের সাদিকুকে ছেঁটে ফেলার দাবি। ওড়িশার আক্রমণাত্মক ফুটবলের সামনে এ বার ছন্দ হারাতে শুরু করলেন মোহনবাগানের ফুটবলাররা। এই পরিস্থিতিতে বুমোসের অভাব খুব বেশি করে বোঝা যাচ্ছিল। তা সত্ত্বেও ২২ মিনিটে গোল করার সুযোগ চলে এসেছিল মোহনবাগানের সামনে। সাদিকুর কাছ থেকে বল পেয়ে বাঁ প্রান্ত দিয়ে ঝড়ের গতিতে উঠে পেনাল্টি বক্সের মধ্যে মাইনাস করেছিলেন সাহাল আব্দুল সামাদ। কিন্তু সময় মতো কিয়ান পৌঁছতেই পারলেন না। তাই গোলও হল না। ন’মিনিটের মধ্যেই হারের আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে সবুজ-মেরুন শিবিরে। বাঁ প্রান্ত থেকে ইসাক ভানলালরুয়াতফে সেন্টার থেকে নেওয়া পুইতিয়ার হেড পেনাল্টি বক্সের মধ্যে মোহনবাগান অধিনায়ক শুভাশিসের হাতে লাগে। পেনাল্টি থেকে ১-০ করেন আহমেদ জাহু। প্রথমার্ধের সংযুক্ত সময়ে (৪৫+৩ মিনিট) ফের ঝলসে ওঠে জাহুর পা। নেপথ্যে সবুজ-মেরুন রক্ষণের অন্যতম ভরসা আশিস রাইয়ের মারাত্মক ভুল। অকারণে ঝুঁকি নিয়ে সাহালকে তিনি পাস দিতে গেলেন। মোহনবাগান তারকা নিজেদের পেনাল্টি বক্সের সামনে বল ধরার আগেই কড়া ট্যাকল করেন জাহু। ছিটকে আসা বল ধরে পেনাল্টি বক্সে ঢুকে পড়েন দিয়েগো। পিছনে থেকে উঠে জাহুকেই ফের পাস দেন তিনি। ঠান্ডা মাথায় ২-০ করেন জাহু। মোহনবাগান শুধু গোলই খেল না, চোট পেয়ে খোঁড়াতে খোঁড়াতে মাঠের বাইরে চলে গেলেন সাহালও! পরিবর্তে নামলেন গ্লেন মার্টিন্স।
আক্রমণের ঝাঁঝ বাড়াতে দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই হাতে চোট পাওয়া অনিরুদ্ধ থাপার পরিবর্তে লালরিনলিয়ানা হামতেকে নামান জুয়ান। সাত মিনিটের মধ্যেই ব্যবধান কমানোর সুযোগ পেয়েছিল মোহনবাগান। ওড়িশার পেনাল্টি বক্সের মধ্যে সাদিকুকে বল সাজিয়ে দিয়েছিলেন গ্লেন। কিন্তু বারও অবিশ্বাস্য ভাবে ক্রসবারের উপর দিয়ে বল উড়িয়ে দিলেন সবুজ-মেরুনের স্ট্রাইকার। মিনিট পাঁচেকের মধ্যে জাহু চোট পেয়ে উঠে যেতেই আক্রমণের ঝাঁঝ কমে যায় ওড়িশার। সুযোগের সদ্ব্যবহার করে এক মিনিটের মধ্যেই ১-২ করেন সাদিকু। হেক্তর ইউতসে পেনাল্টি বক্সের মধ্যে কিয়ানের উদ্দেশে উঁচু করে বল দিয়েছিলেন। তিনি নিজে গোলে না মেরে মাইনাস করেন সাদিকুকে। দুই ডিফেন্ডারের সামনে থেকে বাঁ পায়ের ফ্লিকে অসাধারণ দক্ষতায় বল জালে জড়িয়ে দেন ইউরোতে গোল করা তারকা। তার পরেই গ্যালারির দিকে ছুটে গিয়ে মুখে আঙুল দিয়ে চুপ করার ইঙ্গিত করলেন সমর্থকদের উদ্দেশে।
৬২ মিনিটে অবশেষে ইসাকের পরিবর্তে কৃষ্ণকে নামালেন লোবেরা। এ দিন তাঁকে ভয়ঙ্কর হয়ে উঠতে দেননি সবুজ-মেরুনের ডিফেন্ডাররা। জুয়ানের পরিকল্পনা ফের ধাক্কা খেল ৭১ মিনিটে চোট পেয়ে গ্লেন উঠে যাওয়ায়। পরিবর্ত হিসেবে নামা তরুণ দীপক টাংরি যদিও হতাশ করেননি তাঁকে। ৯০ মিনিটে ব্রেন্ডন হামিলের ভুলে ফের আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছিল সবুজ-মেরুন শিবিরে। বল ধরে কৃষ্ণ ফাঁকায় দাঁড়ানো প্রাঞ্জল ভূমিজকে। তাঁর শট এগিনে ফের গোল লক্ষ্য করে মারেন প্রাঞ্জল। এ বার তাঁর শট বিশালের হাত স্পর্শ করে পোস্টে লাগল। চার মিনিটের মধ্যেই ফের সাদিকু-জাদু। এ বারও নেপথ্যে হেক্তর।
ব্রেন্ডনের সেন্টার হেক্তরের মাথা ছুঁইয়ে ওড়িশা পেনাল্টি বক্সের মধ্যে ওৎ পেতে থাকা সাদিকুর কাছে পৌঁছয়। এগিয়ে আসা গোলরক্ষক অমরিন্দরের দু’পায়ের ফাঁক দিয়ে বাঁ পায়ের নিখুত প্লেসিংয়ে বল জালে জড়িয়ে দেন তিনি। গোলের পরে জার্সি খুলে উৎসব করতে গিয়ে হলুদ কার্ডও দেখলেন।
যুবভারতী ছাড়ার আগে বললেন, “আরও পাঁচ মিনিট বাড়তি সময় পেলে জিতেই মাঠ ছাড়তাম।” জোড়া গোল করেই কি সমালোচনার জবাব দিলেন? হাসতে হাসতে সাদিকু বললেন, “এই ম্যাচে দু’টি গোল করেছি। আশা করছি, আরও গোল করব।”
মোহনবাগান: বিশাল কেইথ, আশিস রাই, ব্রেন্ডন হামিল, হেক্তর ইউতসে, শুভাশিস বসু, অনিরুদ্ধ থাপা (লালরিনলিয়ানা হামতে), লিস্টন কোলাসো, সাহাল আব্দুল সামাদ (গ্লেন মার্টিন্স, দীপক টাংরি), জেসন কামিংস, কিয়ান নাসিরি (সুহেল বাট) ও আর্মান্দো সাদিক