বর্তমানে স্মার্টফোন আমাদের জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশে পরিণত হয়েছে। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত যে জিনিসটি আপনাকে সব সময় সঙ্গ দেয় সেটি হলো আপনার স্মার্টফোন। নানা রকম দরকারি ফিচার ও ব্যবহারের কারণে স্মার্টফোনের জনপ্রিয়তা দিন দিন বাড়ছে। সেই সাথে গ্রাহকের চাহিদার সাথে তাল মিলিয়ে নিত্য নতুন নানা ধরনের, নানা ব্রান্ডের, নানা কনফিগারেশনের স্মার্টফোন আসছে বাজারে। ফলে নতুন স্মার্টফোন কিনতে গেলে ফোন পছন্দ করার ক্ষেত্রে একজন ক্রেতাকে কিছুটা বিপদে তো পড়তেই হয়!
আর আপনি যদি কিছু কিছু জিনিসের উপর লক্ষ না রাখেন তাহলে দোকানদার এমন একটি ফোন আপনার হাতে ধরিয়ে দেবে যেটা কেনার পর আপনি সবসময় পস্তাতে থাকবেন তাই কিছু কিছু জিনিসের উপর আপনি লক্ষ্য রেখে তারপরে স্মার্টফোন কিনতে যান।
Contents
1- বাজেট
অনলাইনে হোক বা দোকানে স্মার্টফোন কেনার আগে, আপনি ঠিক করে নিন আপনি ঠিক কত টাকার মধ্যে স্মার্টফোন কিনতে চান। অর্থাৎ আপনি আপনার বাজেট থেকে ঠিক করে নিন ।এখন বর্তমান দিনে কম থেকে শুরু করে বেশি দামের মধ্যে সব রকম বাজেটে সবরকম ভালো ভালো স্মার্টফোন পাওয়া যায়, তাই আপনি আপনার বাজেট কি ঠিক করে নিন যাতে দোকানে বা অনলাইন মোবাইল কেনার সময় আপনি কনফিউজ নামে পড়েন।
2- প্রসেসর
প্রসেসর কিংবা সি. পি. উ. (CPU) হলো একটি স্মার্টফোনের অন্যতম প্রধান একটি অংশ। অথচ স্মার্টফোন কেনার সময় আমাদের দেশের খুব কম মানুষই এটার দিকে নজর দেন। একটি স্মার্টফোনের প্রায় সমস্ত কাজ নিয়ন্ত্রণ করে প্রসেসর। ফলে আপনার ফোনে কাজ কত দ্রুত হবে কিংবা কত ভালো ভাবে হবে তা কিন্তু এই প্রসেসরের উপরই নির্ভর করে। বাজারে যত রকম স্মার্টফোন পাওয়া যায় তাতে দামের উপর নির্ভর করে নানা রকম প্রসেসর ব্যবহার করা হয়। আপনি যদি এ ব্যাপার সম্পর্কে সঠিকভাবে ওয়াকিবহুল না হন তাহলে দোকানে আপনাকে পুরনো কোন ব্যাকডেটেড প্রসেসার যুক্ত ফোন আপনার হাতে ধরিয়ে দেওয়া হবে,যার ফলে আপনার ফোনটি কিন্তু স্লো কাজ করবে এবং আপনি নতুন ফোন কেনার পরেও সেটি ব্যাবহার করে শান্তি পাবেন না। তাই আপনি দেখুন আপনি যে বাজেটের মধ্যে স্মার্টফোন কিনতে চাইছেন সেই বাজারের মধ্যে সবচেয়ে ভালো স্ট্রং প্রসেসর কোনটি এবং সেই ফোনটিকে আপনি কিনুন।
3- ডিসপ্লে
আপনি কি ধরনের কাজে আপনার ফোনটি ব্যবহার করেন,ব্যবহার করবেন তার উপরই আপনার স্মার্টফোনের ডিসপ্লের আকার ও কোয়ালিটি নির্ভর করবে। আপনি যদি প্রধানত গেমিং বেশি করেন সেই ক্ষেত্রে IPS ডিসপ্লে ওয়ালা আপনার জন্য ঠিক আছে কিংবা ভিডিও দেখার জন্য ফোন কিনতে চান তবে আপনাকে ভালো রেজুলেশন ও বড় আকারের AMOLED ডিসপ্লে যুক্ত ফোনগুলো আপনার জন্য ভালো হবে। আবার স্মার্টফোনের ডিসপ্লের আকার যদি অতিরিক্ত বড় হয় তবে অনেকেই ব্যবহারে অসুবিধা বোধ করেন। সাধারণত ৫.৫ ইঞ্চি থেকে ৬ ইঞ্চির ডিসপ্লের ফোনগুলো ব্যবহারের জন্য আরামদায়ক হয়। আবার ফোনের ডিসপ্লের ব্রাইটনেস কেমন সেটাও খেয়াল রাখা উচিত। ঘরের বাইরে উজ্জ্বল আলোতে যাতে ভালোভাবে দেখা যায় এমন ডিসপ্লে যুক্ত ফোনই কেনা উচিত।
4- ক্যামেরা
স্মার্টফোনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো এর ক্যামেরা। সাধারণত সব ব্যবহারকারীরই কম-বেশি ক্যামেরার প্রয়োজন হয়। তাই স্মার্টফোন কেনার সময় ক্যামেরার দিকে বিশেষ নজর দেওয়া উচিত। অনেকেই মনে করেন ক্যামেরার মেগাপিক্সেল যত বেশি হবে ছবির মানও তত ভালো হবে। এই ধারণাটি আসলে ভুল। স্মার্টফোন কেনার সময় শুধু ক্যামেরার মেগাপিক্সেলের দিকে দেখলে হবে না, বরং ক্যামেরার অ্যাপারচার, ISO লেভেল, ফোকাসের ক্ষমতা ইত্যাদি দিক মাথায় রাখা উচিত। এক্ষেত্রে অ্যাপারচার যত কম হবে তত ভালো। আবার অন্য কিছু বিশেষ বৈশিষ্ট্য, যেমন- ইমেজ স্টাবিলাইজেসন, ডুয়াল লেন্স, HDR এসবের দিকেও খেয়াল রাখা উচিত। এছাড়া সাধারণভাবে কম আলোতে কেমন ছবি ওঠে এবং ক্যামেরার সেন্সরটির নির্মাতা কারা এটিও খোঁজ নিতে পারেন। সাধারণত সনি, স্যামসাং ইত্যাদি ব্রান্ডের ক্যামেরা সেন্সরযুক্ত ফোনগুলো ভালো ছবি তুলতে সক্ষম হয়। তবে সাধারণত বাজেট ফোনগুলোতে খুব একটা ভালো মানের ক্যামেরা ব্যবহার করা হয় না। ভালো মানের ক্যামেরা যুক্ত ফোন নিতে চাইলে আপনাকে বাজেট কিছুটা বাড়াতেই হবে।
5- ব্যাটারি
নতুন ফোন কেনার সময় ফোনের মূল চালিকাশক্তি ব্যাটারিটি কেমন তার দিকে অবশ্যই নজর দেওয়া উচিত। আপনি যদি হেভি ইউজার হন কিংবা গেমিংয়ের জন্য ফোন কিনতে চান তবে অবশ্যই আপনার ফোনের ব্যাটারির ধারণ ক্ষমতা বেশি হওয়া উচিত। এক্ষেত্রে ৫০০০ mAh কিংবা তার বেশি ধারণক্ষমতার ব্যাটারি যুক্ত ফোন কেনা উচিত। তবে সাধারণ ব্যবহারের ক্ষেত্রে ৪৫০০ mAh বা তার নিচের ধারণক্ষমতার ব্যাটারি যুক্ত ফোন আপনার জন্য যথেষ্ট হবে।
6- র্যাম ও রম
র্যাম হলো ফোনের কোনো কাজ সম্পন্ন হওয়ার জন্য অস্থায়ী মেমরী। আপনি যদি একজন হেভি ইউজার হন কিংবা একসাথে অনেকগুলো অ্যাপ ব্যবহার করতে চান তবে আপনাকে বেশি র্যাম যুক্ত ফোন কিনতে হবে। এছাড়াও ভালোভাবে গেমিংয়ের জন্য অবশ্যই আপনার বেশি র্যাম যুক্ত ফোন দরকার হবে। বর্তমানে স্মার্টফোনগুলোর অপারেটিং সিস্টেমের আপডেটের সাথে সাথে অ্যাপগুলোও আপডেট হচ্ছে। এ আপডেটেড অ্যাপগুলো চালাতে আপনার ফোনের বেশি র্যামের প্রয়োজন হবে। আপনি যদি বেশি গেম খেলেন সেই ক্ষেত্রে আপনার কমপক্ষে ৬ জিবি র্যাম প্রয়োজন।
অপরদিকে রম হলো ফোনের স্টোরেজ। রম যত বেশি হবে তত বেশি জিনিস আপনি আপনার ফোনের ইন্টারনাল মেমোরিতে রাখতে পারবেন। আপনি যদি প্রচুর অ্যাপ ব্যবহার করে থাকেন তবে অবশ্যই আপনাকে বেশি রম যুক্ত ফোন কিনতে হবে। অনেক স্মার্টফোনে আবার এক্সটারনাল এসডি কার্ড বা মেমরি কার্ড ব্যবহার করা যায় না। এমন ফোনে আপনার ইন্টারনাল স্টোরেজ বা রমই একমাত্র ভরসা। সেক্ষেত্রে ফোনের রম অবশ্যই বেশি হতে হবে। কমপক্ষে আপনাকে ১২৮ জিবি রম যুক্ত স্মার্টফোন কেনা দরকার এখনকার দিনে।
7- আপডেট
ফোন কেনার আগে ফোনের আপডেট টা আপনি দেখে নিন ফোনের আপডেট হলো ফোনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ এটি ফোনের সফটওয়্যার আপডেট। আপনি দেখে নিন আপনি যে ফোন টি কিনতে চাইছেন সেটি তে লেটেস্ট এন্ড্রয়েড ভার্সন রান করছে কি না এক্ষেত্রে আপনার ফোনটি যতো লেটেস্ট ভার্সন থাকবে আপনার ফোনে ততো আপডেট আসবে,এবং সেই ক্ষেত্রে দীর্ঘদিন আপনার ফোনটি ব্যবহার করতে পারবেন।
8- 5জি (5G)
এখন কার দিনে নতুন স্মার্টফোন কেনার আগে লক্ষ রাখতে হবে আপনার ফোনটি 5G স্মার্টফোন কিনা।
নতুন ফোন কিনতে গেলে অবশ্যই 5G স্মার্টফোন কিনুন, কেননা বর্তমানে ভারতবর্ষে চারিদিকে 5G নেটওয়ার্ক চলে এসেছে তাই নতুন ফোন কেনার আগে অবশ্যই আপনি 5G স্মার্টফোন কিনুন ।4G স্মার্টফোন এখন না কেনাটাই ভালো