আজকের আর্টিক্যালএজমি, বাড়ি, ফ্লাট (flats), অফিস ইত্যাদি বেচা-কেনা করাকেই রিয়েল এস্টেট ব্যবসা (Real Estate) বলে। মানুষের জীবনের প্রধান চাহিদাগুলো হলো খাদ্য, বস্ত্র ও বাসস্থান। প্রত্যেক মানুষেরই বাসস্থানের প্রয়োজন হয়, সুষ্ঠু জীবনযাপনের জন্য।
রিয়েল এস্টেট ব্যবসায় মানুষের এই চাহিদা পূরণে সাহায্য করে। শুধুমাত্র বসবাসের স্থানের ঘাটতি মেটানোই এই ব্যবসার লক্ষ্য না। অফিস, দোকান, মার্কেট, মাল্টিপ্লেক্স, ফ্ল্যাট, ইত্যাদির ব্যবস্থা করা হলো, এই ব্যবসার অন্যতম একটি লক্ষ্য।
যাইহোক, এখন কথা হলো, রিয়েল এস্টেট ব্যবসা শুরু করার ধাপগুলো কি কি? নিচে রিয়েল এস্টেট ব্যবসার প্রত্যেকটা ধাপ দেয়া হলো।
Contents
১. পরিকল্পনা করুন
প্রত্যেক ব্যবসাতেই পরিকল্পনার গুরুত্ব অনেক। পূর্ব পরিকল্পনা না করে কোনো ব্যবসা শুরু করলে তা কখনোই সাফল্যমণ্ডিত হয় না। এজন্য, আগে ব্যবসায় সম্পর্কে রিসার্চ করুন, তারপর ব্যবসায় করার সিদ্ধান্ত নিন।
ব্যবসায় করে যেমন সহজেই মানুষ অনেক ইনকাম করতে পারে ঠিক তেমন ক্ষতির সম্মুখও হয় যদি, পূর্ব সুষ্ঠু পরিকল্পনা ছাড়াই ব্যবসায় করতে ঝাঁপিয়ে পড়ে। তাই আগেই ভেবে নিন কীভাবে কি করবেন?
২. মূলধন / পুঁজি বিনিয়োগ
রিয়েল এস্টেট এর ব্যবসায়ে বিপুল পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগের প্রয়োজন হয়। তাই আপনার ব্যবসায় এর জন্য একটি স্থায়ী অর্থ যোগান সংস্থা ভেবে রাখা উচিত। যাতে আপনাকে হঠাৎ কোন আর্থিক সমস্যাতে চিন্তিত হয়ে, মাথায় হাত দিয়ে বসতে না হয়। ব্যবসার উপর আর্থিক সমস্যার প্রভাব পড়া উচিত না।
তাই হঠাৎ করেই রাতারাতি কোন পূর্ব পরিকল্পনা না, করেই অর্থ বিনিয়োগ না করে, আপনি যদি অন্য কোন চালু ব্যবসায় বা স্থায়ী চাকরি মধ্যে সংযুক্ত থাকেন তাহলে সেটিকে বজায় রেখে ধীরে ধীরে স্বল্প অর্থের মাধ্যমে আপনার ব্যবসাটিকে একটু একটু করে সম্প্রসারণ করতে পারেন।
এ ছাড়া আপনি আপনার কোনো বিশ্বস্ত বন্ধু বা আত্মীয় এর সাথে অংশীদারি-ভাবে একসাথে রিয়েল এস্টেট ব্যবসাটি চালাতে পারেন। তাহলে আপনাকে আর্থিক ভাবে সমস্যায় পড়ার হাত থেকে রক্ষা করবে। বিজনেস লোন পাওয়ার উপায় লেখাটি পড়েও জানতে পারবেন, লোন পাওয়ার উপায় সম্পর্কে।
প্রথমদিকে আপনি মানুষের বাসা মেরামত কাজ বা ছোট ফ্ল্যাট ও দোকান নির্মাণের কাজ করে দিয়ে, রিয়েল এস্টেট ব্যবসায়ে পা রাখতে পারেন। আপনার ব্যবসায় শুরু করার জন্য মূলধন কম থাকে, তবে কোনো বড় রিয়েল এস্টেট কোম্পানির সাথে যুক্ত হয়ে যেতে পারেন।
৩) অফিস স্থাপন
রিয়েল এস্টেট ব্যবসায়ের জন্য অফিস স্থাপন
যোগাযোগের কেন্দ্র হিসেবে আপনার একটি নিজস্ব অফিসের প্রয়োজন হবে। এমন একটি জায়গা নির্বাচন করুন অফিস স্থাপন করার জন্য যা সকলের কাছেই গ্রহণ যোগ্য ও খুব সহজেই মানুষ জায়গাতে গিয়েই বুঝতে পারে রিয়েল এস্টেট অফিস কোনটি। এতে আপনার ব্যবসাকে সবার কাছে বিশ্বস্ত করে তুলবে।আপনি আপনার অফিসটিকে যতো সুন্দর করে ছিমছাম করে গড়ে তুলতে পারবেন তা আপনার ভোক্তাদের মনে আপনার রিয়েল এস্টেট শিল্পের সম্পর্কে দক্ষতা নিয়ে আশার আলো দেখাবে।
আপনার অফিসের আকর্ষণীয় ডিজাইন নিজেই আপনার ভোক্তার কাছে প্রমাণ দেবে আপনি একজন ক্রেতাকে কতটা উপযুক্ত আবাসন দিতে পারবেন। তাই চেষ্টা করবেন যেন আপনার অফিসটি আকর্ষণীয়ভাবে ডিজাইনিং হয়।
৪) অর্থনীতির জ্ঞান অর্জন করুন
আপনার যদি অর্থনীতি বিষয়ে জ্ঞান না থাকে তবে, রিয়েল এস্টেট ব্যবসায়ে সফলতা অর্জন প্রায় অসম্ভব। লাভ, ক্ষতি হিসাব বিষয়ে আপনি যত বেশি দক্ষতা দেখাতে পারবেন, ততই বেশি সফলতা আপনার কাছে ধরা পড়বে।
মনে করুন, আপনি ফ্ল্যাট তৈরির একটি প্রজেক্ট হাতে নেবেন। এখন আপনাকে অর্থনীতির দক্ষতার জ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে লাভ ক্ষতির হিসাব বের করতে হবে, এ প্রজেক্টে কত পরিমাণ খরচ হতে পারে আপনার, প্রজেক্টে কাজ শুরু করার আগেই আপনাকে কাজটির খরচ সম্পর্কে ধারণা করতে হবে। সঠিক হিসাব করতে না পারলে লাভ করতে পারবেনই না সাথে হয়তো মূলধনও হারিয়ে ফেলতে হতে পারে।
আবার কোনও কোনও প্রজেক্টর কাজ নাও পেতে পারেন, কারণ আপনি যদি হিসাব এর ঠিক মতো ধারণা করতে না পারেন এবং প্রচুর অর্থ দাবি করে বসেন তাহলে কেউই আপনাকে দিয়ে তার কোনও প্রজেক্টই নির্মাণ করাতে চাইবেন না। তাই রিয়েল এস্টেট ব্যবসায় উদ্যোক্তা হতে চাইলে অর্থনীতির সকল বিষয়ে বিষয়ে বাস্তব জ্ঞান অর্জন করার চেষ্টা করুন।
৫) রিয়াল এস্টেট ব্যবসায়ের বিভিন্ন বিভাগ
এই ব্যবসায় এ কিছু বিভাগ রয়েছে। আপনি কোন বিভাগ নিয়ে ব্যবসাটি করবেন তা সম্পূর্ণ আপনার ইচ্ছা এবং দক্ষতার উপর নির্ভর করে। বিভাগগুলো হলো,
রেসিডেন্সিয়াল রিয়েল এস্টেট
অনুন্নত জমি
ইন্ডাস্ট্রিয়াল রিয়েল এস্টেট
কমার্শিয়াল রিয়েল এস্টেট
বিশেষ উদ্দেশ্যে জনসাধারণের দ্বারা ব্যবহৃত সম্পত্তি
৬) রিয়েল এস্টেট ব্যবসায় নিবন্ধন
রিয়েল এস্টেট ব্যবসায়ের জন্য অনেক নিয়ম কানুন রয়েছে। রিয়েল এস্টেট ডেভেলপার হিসাবে নিবন্ধন হওয়ার জন্য নিচের কাগজপত্রগুলো লাগবে যথা:
ট্রেড লাইসেন্স।
ট্যাক্স আইডেন্টিফিকেশন নম্বর(টিআইএন) সার্টিফিকেট।
মূল্য সংযোজন কর(VAT)রেজিস্ট্রেশন নম্বর।
প্রকল্প প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের অভিজ্ঞতা (যদি থাকে); কারিগরী ব্যক্তিদের যোগ্যতার প্রমাণপত্র (স্থপতি, প্রকৌশলী ও পরিকল্পনাবিদের শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদ এবং সংশ্লিষ্ট পেশাজীবী প্রতিষ্ঠানের সদস্য পত্রের সনদ)।
কোম্পানী হলে, মেমোরেন্ডাম অব এসোসিয়েশন(Memorandum of Association) এবং আর্টিকেলস্ অব এসোসিয়েশন (Articles of Association)সহ সার্টিফিকেট অব ইনকর্পোরেশন(Certificate of Incorporation)।
রিয়েল এস্টেট এন্ড হাউজিং এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (রিহ্যাব) অথবা ল্যান্ড ডেভেলপার্স এসোসিয়েশন এর সদস্য পদের নিবন্ধনের কপি, যদি থাকে।
ব্যবসা সফল ভাবে পরিচালনা করার জন্য পরিকল্পনার পর তার ২য় ধাপ আইনত বৈধতা প্রাপ্তি খুবই প্রয়োজন। আইনগত বৈধতা একদিকে যেমন ক্রেতাদের আপনার ব্যবসায় এর প্রতি বিশ্বাসযোগ্যতা বাড়িয়ে দেয় তেমনি এটি কোনো রকম আইনি সমস্যা হতে আপনাকে দুরে রাখবে।
রিয়েল এস্টেট ব্যবসায় আপনি হয়তো নানান আইনি সমস্যার সম্মুখীন হতে পারে। যেমন জমির রেজিস্ট্রেশন নিয়ে, মিউটেশন নিয়ে নানা রকমের কাগজ পত্রের ঝামেলা এমন আরও অনেক কিছু। তবে এতে অযথাই বিচলিত না হয়ে পরে সততা সাহসের সাথে আইনি বৈধ পথে সমস্ত সমস্যাগুলি সহজেই মিটিয়ে ফেলতে পারেন তাহলে ক্রেতাদের কাছে আপনার প্রতি বেশি বিশ্বাসযোগ্য করে তুলতে পারেন।
৭) Real Estate ব্যবসায়ের নিয়ম কানুন
জমির মালিকের সাথে ভূমি আদান প্রদানের নিয়ম
জমির মালিক ও ডেভোলপারের মধ্যে লিখিত দ্বি-পাক্ষিক চুক্তি(Joint Venture Agreement) করতে হবে।
ডেভেলপারের প্রাপ্ত অংশের পরিমাণ উল্লেখ থাকবে এবং প্রাপ্ত অংশ সহ ভূমি উন্নয়ন বা নির্মাণ কাজ শুরু ও শেষ করার সময় উল্লেখ থাকবে।
৮) নিজস্ব ব্র্যান্ড তৈরি
একটি ব্যবসাকে সফল করে তোলার মূল অংশ ব্র্যান্ডিং। আপনার রিয়েল এস্টেট ব্যবসাটিকে মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য ও বিশ্বাসযোগ্য করে গড়ে তোলার জন্য ব্র্যান্ডিং খুবই গুরুত্বপূর্ণ অংশ। আপনাকে খেয়াল রাখতে হবে যে, আপনি যতো বেশী ভোক্তার চাহিদাকে গুরুত্ব দেবেন ততই আপনার ব্যবসায় এর ব্র্যান্ডিং গুণগত মান বেড়ে যাবে।
পরিশেষে
রিয়েল এস্টেট ব্যবসায়তে সফলতা পেতে হলে আপনার প্রচুর অভিজ্ঞতা থাকতে হবে, অভিজ্ঞতা ছাড়া আপনি রিয়েল এস্টেট ব্যবসায় টিকে থাকতে পারবেন না। আপনি যদি কোনোরকম প্রেকটিক্যাল অভিজ্ঞতা ছাড়াই বড় ধরনের কোনও প্রজেক্ট হাতে নেন, তবে অনেক বড় কোনও ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারেন, এমনকি মূলধন/ পুঁজি হারিয়ে আপনি নিঃস্ব হয়ে যেতে পারেন।