ব্যবসা হল সবচেয়ে উত্তম উপায় অর্থ উপার্জন করার ক্ষেত্র। ইসলাম ধর্মে অর্থ উপার্জনের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট কোন পেশার নির্ধারণ করে দেওয়া হয়নি। তবে যে বিষয়ে জোর দেওয়া হয়েছে তাহলো হালাল উপার্জনের ক্ষেত্রে। হালাল পন্থা অবলম্বন করে উপার্জন করাকে ইসলাম ইবাদত হিসেবে আখ্যায়িত করেছে। এক্ষেত্রে ব্যবসা এর মধ্যেও হালাল-হারাম এর ব্যাপার আসতেই পারে। তাই হালাল ব্যবসা সম্পর্কে জানুন এবং হালাল উপার্জনের মাধ্যমে আল্লাহর ইবাদত করুন।
হালাল ব্যবসা করার আগে আমাদেরকে জেনে নিতে হবে যে হালাল ব্যবসা আসলে কি এবং এই হালাল ব্যবসার কি কি নিয়ম-কানুন আছে
Contents
হালাল ব্যবসার নিয়ম কানুন
হালাল ব্যবসার নিয়ম বলতে সেই সকল কার্যক্রম কে বোঝানো হয় যা রাসূল (স:) করেছিলেন তার ব্যবসা পরিচালনার জন্য। যেখানে থাকবে না কাউকে ধোকা দেওয়া, কাউকে ঠকানো, অথবা সেসব কাজ যার জন্য ব্যবসা হারাম হয়ে যায়।
তাহলে ব্যবসা হালাল হওয়ার জন্য শর্ত গুলো কি? নিম্নে এর সংক্ষিপ্ত ধারণা তুলে ধরা হলো। ব্যবসা হালাল হওয়ার শর্ত
- ১. বিক্রিত পণ্য অবশ্যই হালাল বস্তু হতে হবে
- ২. ওজনে কম দেওয়া বা পরিমাণে কম দেওয়া যাবে না। কাউকে প্রতারিত করা যাবে না
- ৩. বিক্রি করা পণ্য ফেরত নেওয়ার নিয়ম ও ব্যবস্থা রাখা জরুরী
- ৪. সুদ ঘুষ জড়িত এমন লেনদেন থেকে দূরে থাকতে হবে
- ৫. পণ্য বাস্তবে কোনো ত্রুটি বা ভেজাল থাকলে তা বিক্রি করা যাবে না এবং অবশ্যই পণ্যের ত্রুটি থাকলে তা গ্রাহককে আগে জানিয়ে দিতে হবে।
- ৬. সিন্ডিকেট বা কৃত্রিম সংকট তৈরি করা যাবে না
এ ছাড়াও আরও বেশ কিছু শর্ত রয়েছে যা ব্যবসায় ধরণ অনুযায়ী পরিবর্তনশীল। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই উপরে উল্লেখিত শর্তগুলো প্রযোজ্য।
ব্যবসা সমূহ গুলো কি কি?
1- কাপড়ের ব্যবসা
বাংলাদেশ বস্তশিল্প তৈরির জন্য বেশ জনপ্রিয়। এবং ইসলামি শরিয়াত মোতাবেক এটাকে হালাল ব্যবসা হিসেবে ধরা হয়। এটা যেমন দেশের বাজারে খুব চাহিদা সম্পর্ন তেমনই দেশের বাইরেও রপ্তানি করা হয় বাংলাদেশে বানানো তৈরি পোশাক।
বাংলাদেশে বর্তমানে তিনতি উপায়ে কাপড়ের ব্যবসা পরিচালনা করা যায়। প্রথমত, কাপড় উৎপাদন করে ব্যবসা করা, তাছাড়া উৎপাদিত পন্য পাইকারি ডিস্টিবিউটার হিসেবে বিক্রি করে ব্যবসা, অথবা কাপড়ের পোশাক এর খুচরা বিক্রেতা দোকান দিয়ে ব্যবসা এবং এগুলোর কোনো টা সম্ভব না হলে সল্প পুঁজি নিয়ে অনলাইনে কাপড় বা পোশাক নিয়ে ব্যবসা।
কাপুড়ের ব্যবসা কিভাবে করা যায় এবং কোন পদ্ধতিতে করলে ভালো হয় তা নিয়ে বিস্তারিত জানুন বুজুন এবং তারপরেই এই ব্যবসা শুরু করার চিন্তা করুন কারন পর্যাপ্ত ধারনা না থাকলে এই ব্যবসায়ে অগ্রসর হওয়া কিছুটা কঠিন হয়ে দাঁড়াবে। তবে মূল ব্যাপার এই যে এটি সম্পুর্ন হালাল একটা ব্যবসা যদি আপনি ব্যবসা হারাম হয় এমন কিছু না করে থাকেন।
2- মুরগির ফার্ম
গৃহপালিত পশু পাখি যেগুলো যেগুলো ইসলামে হারাম হিসেবে ধরা হয় না এমন সব প্রাণীর ফার্ম করার মাধ্যমে পর্যাপ্ত চাহিদা পুরনে সাহায্য করাটা ইসলাম সমর্থন করে থাকে। এক তো এই ব্যবসাটি হালাল তার উপর মুরগির ফার্মের মাধ্যমে বাজারে গোস্তের চাহিদা পুরনে ব্যাপক ভুমিকা পালন করা হচ্ছে। তো বলা যায় উভয় দিক থেকে চিন্তা করলেই মুরগির ফার্মের ব্যবসাটি চাহিদা সম্পন্ন হালাল ব্যবসায় এর অন্তর্ভুক্ত। তাই আপনার যদি মুরগির ফার্মের ব্যবসা করার মত ব্যবস্থা থেকে থাকে তাহলে অবশ্যই এই ব্যবসাটি শুরু করতে পারেন কারন এটি হালাল এবং পাশাপাশি চাহিদা সম্পন্ন লাভজনক ব্যবসা।
3- ফার্মেসি বা ওষুধের দোকান
আল্লাহ আমাদের বিভিন্ন রোগবালাই দিয়ে থাকেন আমাদের পরিক্ষার করার জন্য। আবার আল্লাহ ই আমাদের তার থেকে আরোগ্য দিয়ে থাকেন। তবে তা হঠাৎ করেই হয় না প্রয়োজন হয় উসিলার। আর তার জন্যই রয়েছে এতোশত চিকিৎসক আর চিকিৎসা ব্যবসা এবং ঔষধ। যার মাধ্যমে আমরা সুস্থ হয়ে থাকি। এই কথা গুলো বলার কারন এটা বোঝানো যে এটা মানুষের জন্য কল্যাণকর। এবং আল্লাহ তায়ালা যে সকল বিষয়বস্তু আমাদের জন্য হালাল করেছেন যা জন্য কল্যাণকর।
এতে বোঝাই যাচ্ছে ফার্মেসি বা ঔষুধের দোকান দেয়ার মাধ্যমে তা মানুষের কাছে পৌছে দেয়ার ব্যবস্থাটাও হালাল ব্যবসা এর অন্তর্ভুক্ত। ঔষধের ব্যবসা খুবই আরামদায়ক ও হালাল ব্যবসা এর অন্যতম মাধ্যম। কোম্পানির বিভিন্ন প্রতিনিধিদের কাছ থেকে ভালো মানের ঔষধ ও ঠিক ভাবে দাম নির্ধারনের মাধ্যমে ব্যবসা চালিয়ে গেলে অবশ্যই ফার্মেসির ব্যবসা বা ঔষধের দোকানের ব্যবসায় হালাল হবে।
তবে এক্ষেত্রে আপনাকে অবশ্যই ফার্মাসিস্ট অথবা নূনতম যোগ্যতা থাকা লাগবে যা প্রয়োজন এই সেক্টরে কাজ করার জন্য। কারন এইখানে একটা ভুল হতে পারে কোনো মানুষের মৃত্যুর কারনও। তারই পাশাপাশি জানুন কিভাবে ঔষধের ব্যবসা করতে হয় সে সম্পর্কে বিস্তারিত।
4- ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট
একটা সময় ছিলো যখন কোনো ধরনের অনুষ্ঠান হলে লোকেরা নিজেদের বাসায় নিজেদের মত করে সাজিয়ে তা উপস্থাপন করতো অথবা ডেকোরেটরদের মাধ্যমে তা সাজিয়ে নিতো। তবে বর্তমানে এটার মধ্যে বেশ পরিবর্তন দেখা দিয়েছে এখন মানুষ যেকোনো ধরনের অনুষ্ঠানের জন্য যেমন : বিয়ে সাদি থেকে শুরু করে কোনো কোম্পানির ইভেন্ট বা জাতীয় অনুষ্ঠান বা ধর্মীয় মজলিশের ব্যবস্থার জন্য ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট সার্ভিস খুজে থাকেন।
সরাসরি ফিজিক্যাল কোনো পন্য বিক্রি ব্যাতীত কেবল সার্ভিসের মাধ্যমে যদি হালাল ব্যবসায় পরিচালনার মাধ্যমে আয় করতে চান তাহলে ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট হতে পারে সেরা পছন্দ গুলোর মধ্যে একটি। আপনার সার্ভিসটি যদি লজিক্যাল ও ভ্যালু ফর মানি হয়ে থাকে তবে আপনি ব্যাপক ভাবে অর্ডার পাবেন বিভিন্ন occation এ এই ব্যবসায়ের মাধ্যমে।
5- Rent a Car (ভাড়ায় চলিত গাড়ির ব্যবসা)
দিন দিন যাতায়াতের ব্যাপারে মানুষ সচেতন হচ্ছে। পাশাপাশি সচেতন হচ্ছে খরচের ক্ষেত্রেও। আর এখানেই সুযোগ হয়ে উঠছে রেন্ট এ কার বা ভাড়ায় চলিত গাড়ির ব্যবসা। এখনো দেখা যায় যে উবার, পাঠাও এর মত প্লাটফর্মে একটা গাড়ি ভাড়া নেয়ার ক্ষেত্রে চাহিদা কতটা। আর এই চাহিদা কেমন এই দুইটা প্লাটফর্মের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয় বরং ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে সারাদেশে।
ধরুন আপনি কোনো প্রয়োজনে গাড়ি ভাড়া করবেন সারাদিনের জন্য সেই সিচুয়েশনে যখন উবার পাঠাও এর মত প্লাটফর্মে তার জন্য যে চার্জ ধার্য হবে তার থেকে অনেক কমে গাড়ি ভাড়া নেয়া যাবে আপনার স্থানীয় কোনো রেন্ট এ কার সার্ভিসে। সেক্ষেত্রে কি লস হয় তাদের? অবশ্যই হয় না।
আপনি এমন একটি সার্ভিস দেয়ার কথা ভাবছেন যা পুর্বে ছিলো এখন আছে এবং ভবিষৎতেও থাকবে। এই ব্যবসায় করতে পারেন দুইটা উপায়ে। প্রথমত যদি আপনার গাড়ি কেনার মত অবস্থান থাকে তাহলে কিনে ভাড়া দেয়ার মাধ্যমে ব্যবসা করা অথবা মধ্যস্থ ব্যবসায়ী হিসেবে কাজ করা যেমন আপনি গাড়ির মালিকের সাথে ডিল করে আপনার দায়িত্বে গাড়ি নিয়ে এসে ঘন্টা বা দিন হিসেবে বিভিন্ন গ্রাহককে ভাড়া দেয়া। এক্ষেত্রে অবশ্যই আপনার একটি জায়গা থাকতে হবে গাড়ি রাখার ও একাধিক গাড়ির ব্যবস্থা করতে হবে। রিজেনেবল মূল্যে আপনি যদি এই সার্ভিসটি দিতে পারেন তাহলে এটা একে তো উপকার হবে লোকেদের এবং পাশাপাশি এটি হালাল ব্যবসায় এর অন্তর্ভুক্ত হবে।
6- হালাল ফুড
মানুষ বাচার জন্য খাবার গ্রহন করে থাকে, জৈবিক চাহিদা গুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে খাদ্য। সেই খাদ্য হতে হবে শতভাগ হালাল। সেই হালাল খাদ্যের খোজে ও হালালকে কেন্দ্র করে গড়ে তোলা হালাল খাবারের ব্যবসা হতে পারে অন্যতম সেটা পছন্দ গুলোর মধ্যে একটি যদি আপনি হালাল ব্যবসায় এর সন্ধানে থেকে থাকেন।
বাঙালি খাবার প্রিয় যার কারনে এদেশের প্রতি অলি গলিতে মিলে বিভিন্ন ধরনের খাবার। কিছু খাবার আছে এমন যেগুলোকে ইসলাম সমর্থন করে না বা হারাম হিসেবে গন্য করে আবার কিছু খাবার এমনো আছে যা সম্পুন্ন হালাল। ব্যবসা করার ক্ষেত্রে অবশ্যই হালাল খাবারের ব্যবসায় করার উপরেই ফোকাস রাখতে হবে।
7- হালাল কসমেটিকস
কসমেটিকস খুব পরিচিত একটা নাম বর্তমান সমাজে। সৌন্দর্য বলা হোক বা ত্বক পরিচর্চা মানুষ বিভিন্ন সময় কসমেটিকস ব্যবহার করে থাকে তবে বাজারে যে সকল কসমেটিকস সাধারনত বেশি পাওয়া যায় তার মধ্যে বিভিন্ন ভেরিয়েন্ট থাকে যার মধ্যে কিছু কিছু হারাম (এই কসমেটিকস গুলোতে এমন সব উপাদান দেয়া হয়ে থাকে যা হারাম) আর কিছু কিছু আছে যা হালাল।
এই পর্যায়ে আপনি যদি কসমেটিকসের ব্যবসা করতেই চান তাহলে আপনাকে বাছাইকৃত হালাল কসমেটিকস গুলো নিতে হবে ব্যবসা করার জন্য যাতে আপনার ব্যবসাও হালাল হয়। কারন হারাম পন্য বা দ্রব্যের ব্যবসা কখন ও হালাল ভাবে বিবেচনা করা যায় না। কসমেটিকস ব্যবসা শুরু করার আগে আপনার নির্ধারন করে নিতে হবে আপনি কাদের টার্গেট করে ব্যবসা গড়ে তুলতে চাচ্ছেন এক্ষেত্রে কসমেটিকসের ব্যবসা কিভাবে করতে হয় তা নিয়ে আমাদের ওয়েবসাইটে বিস্তারিত আর্টিকেল দেয়া আছে, যদি আপনি এই ব্যবসায়ে ইচ্ছুক হয়ে থাকেন তাহলে দেখে নিতে পারেন।